একজন কর্মচারী যতো শিক্ষিত, প্রশিক্ষিত,দূরদর্শী হন না কেন বুদ্ধিমত্তায় তিনি কখনোই তাঁর মালিককে অতিক্রম করতে পারেন না। সিদ্ধান্ত গ্রহণে মালিকের কথাই শেষ কথা।
ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই ।
ঢাকার অতি সন্নিকটে একনামে চিনতে পারবেন এমন একটি প্রতিষ্ঠান কয়েকটি বিশাল ওয়্যারহাউজ ( warehouse ) করেছে ; আমি নিজেও গিয়েছিও সেখানে। এই ইনভেস্টমেন্টের পক্ষে মালিকের দূরদর্শী(!) চিন্তা হচ্ছে– কিছু কিছু ব্র্যান্ড ক্রেতা আছে , যারা হয়তো ভবিষ্যতে কারখানায় বা পোর্টে ইন্সপেকশন করতে চাইবে না ; নিরপেক্ষ তৃতীয় কোন একজায়গায় ইন্সপেকশন করতে চাইবে । স্টোর ডিস্ট্রিবিউশনের স্বার্থে নিজেদের মতো করে রি-প্যাকিং করে নিতে চাইবে। সোজা কথা, মজুরী কম বলে, পশ্চিমের দেশে নিজেদের ওয়্যারহাউজে যে কাজটি তাদের করতে হবে, একটু আগেভাগেই সেটা বাংলাদেশ থেকে করে নিতে চাইবে। দূরদর্শী চিন্তা; ক্লিক করলে দীর্ঘমেয়াদী স্থায়ী ব্যবসা।
সেই উদ্দেশ্যেই বিশাল গগনচুম্বী কয়েকটি ওয়্যারহাউজ, সারাক্ষণ শীতল বাতাস, বিশাল ক্রেন,ট্রলি , অসংখ্য স্যাম্পল র্যাক, অত্যাধুনিক ইন্সপেকশন রুম, মেশিনপত্র। যে কোন পোর্ট ওয়্যারহাউজের সমতূল্য কার্গো লোডিং-আনলোডিং এর জায়গা , ইত্যাদি ইত্যাদি। এমনকি বন্ডিং করে সরাসরি জাহাজে তুলে দেওয়ার জন্য , সমস্ত সুবিধাসহ সরকারী কাস্টম অফিসও আছে ওয়্যারহাউজ-এর ভিতরে !
তো, এই দক্ষযজ্ঞ ইনভেস্টমেন্ট বেশ কয়েকবছর ধরে পড়ে আছে ক্রেতার আশায়। গুচ্ছের অর্থনাশ!
এই দূরদর্শী বুদ্ধিমত্তা একজন কর্মচারীর হলে এবং ইনভেস্টমেন্টটা মাস খানেক বসে থাকলে তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানগুলোর চামড়া তুলে নেওয়া হত। যেহেতু মালিক করেছেন, তার বুদ্ধিমত্তা প্রমাণিত !
আমার ব্যক্তিগত ব্যাখ্যামূলক সংযুক্তিঃ প্রথমত- যতোই কর্পোরেট কালচারের কথা বলি না কেন , তৃতীয় বিশ্বের বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা একমাত্র মালিকেরই আছে, কর্মচারীর নেই । দ্বিতীয়ত- একজন মালিক তার সাফল্যের কথাগুলোই আলোচনা করে,তার প্রতিষ্ঠানে সেটা নিয়েই আলোচনা হয়। তার ব্যর্থতার জায়গাটা নির্মোহ দৃষ্টিতে কেউ আলোচনা করে শিক্ষা নিতে চায় না ; সেটা হয়তো পশ্চিমা রীতি। জুয়ারীরা যেমন শুধু জিতে আসার গল্প করে, পরাজয়ের গল্প আমাদের আবিষ্কার করতে হয়! আমাদের মালিকদের ক্ষেত্রেও তাই।
[প্রথম প্রকাশঃ ১২ই অক্টোবর,২০১৫]
সাম্প্রতিক মন্তব্য