টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস ট্রেডে কিছুদিন কাটিয়ে ফেলেছি বলে , নবীন প্রজন্মের অনেকে ফোনে বা সরাসরি তাঁদের ক্যারিয়ার নিয়ে সাজেশন চায়। কোথায় চাকরি করলে ভালো হয় ভাইয়া ; ওই খানে যোগ দিতে চাচ্ছি , আপনার সাজেশন কি ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি আমার অভিজ্ঞতার আলোকে তাঁদের বলি– কাজের ক্ষেত্রে সফল সিনিয়র ৪ জন ভাইয়ের সঙ্গে ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বললে পাঁচ রকমের সাজেশন পাওয়া যায়! আমাদের সময়েও তেমনটাই পেয়েছি, তোমাদের সময়েও পাবে । যেহেতু জীবন তোমাদের নিজের, সুতরাং সবার কথাই শোন, কিন্তু সিদ্ধান্তটা নিজেই নাও।
কে না জানে , একই ডাক্তারের কাছে গিয়ে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে এসে কেউ কেউ সেই ডাক্তারের চৌদ্দ-গোষ্ঠী উদ্ধার করে। আবার ওই ডাক্তারের সুচিকিৎসায় কেউ ভাল হয়ে তাঁকে দেবতাতূল্য জ্ঞান করে পঞ্চমুখ হয়। যার সাথে কথা হচ্ছে, তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি ক্যারিয়ারে ব্যাপারে কথা বলে থাকেন। সুতরাং তাঁর সময়কাল, প্রেক্ষিত তো তোমার সময়কাল ও প্রেক্ষিত থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তাঁর অভিজ্ঞতার সেইটুকুই নাও, যেটা তোমার কাছে প্রয়োজনীয় মনে হবে।
অতএব নীচের লেখাটিও আমার নিতান্তই ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার বিভ্রান্তির স্মৃতিচারণা। আমার সতীর্থ , অগ্রজ অনুজেরা যে যেখানে কর্মরত আছেন; তাঁদের পরিশ্রান্ত উদ্যমী চেহারার কথা আমি জানি। তাঁদের একেকজন টেক্সটাইল, গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির একেক স্পেশালাইজড সেক্টরে এমনভাবে দেশের নাম উজ্জ্বল করে চলেছেন ; যে এঁদের সামনাসামনি হলে আমি নিজেই খুব নুইয়ে পড়ি। আমিতো আসলে আমার ইঞ্জিনিয়ারিং বা টেকনিক্যাল ডিগ্রীর তেমন কিছুই হাতে কলমে করে দেখতে পারিনি। নতুন কিছু আবিষ্কারও করিনি। কিভাবে কিভাবে চলে এসেছি মার্চেন্ডাইজিং, মার্কেটিং আর অ্যাডমিনিস্ট্রিটিভ একটা অবস্থানে। এখানে সারাদিন ধরে আমাকে গুচ্ছের কমার্শিয়াল আর হিজিবিজি কাজ নিয়ে থাকতে হয়। টেকনিক্যাল ডিসিশন মেকিংএর বলতে গেলে তেমন ছিটেফোঁটাও নেই।
আমি যখন জীবনের আঁকাবাঁকা পথ ধরে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়েছি, তখন তেজগাঁও এর বেগুনবাড়ির বৃক্ষশোভিত খানিকটা গ্রাম্য ক্যাম্পাস দেখে বেশ আশাহত হয়েছিলাম। আমি তখনো বিখ্যাত লেখক ডঃ হুমায়ূন আহমেদ স্যারের রসায়ন বিভাগের ছাত্র, নতুন করে পদোন্নতি হয়েছে ফলিত রসায়নে। কিন্তু আমি না যাই কেমিস্ট্রির ক্লাসে , না যাই নতুন করে ফলিত রসায়নে ভর্তি হতে। বিভ্রান্ত ও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে এদিক সেদিক ঘোরাফেরা করি। তো , নানা পারিবারিক চাপে টেক্সটাইলে ভর্তি হওয়ার পরে মিরপুর থেকে বাসে করে ফার্মগেটে নামতাম। রিকশাওয়ালাগুলো আবার টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ চেনে না। হয় তাঁদেরকে বলতে হয় পলিটেকনিক যাব অথবা বিজি প্রেসে যাব। টেক্সটাইল বললে হা করে চেয়ে থাকে। সেটাই স্বাভাবিক। টেক্সটাইলে ভর্তি হওয়ার আগে আমি নিজেই কি চিনতাম যে কাপড়চোপড়ের উপরেও ইঞ্জিনিয়ারিং হতে পারে ! আমার স্কুল-কলেজের বন্ধুরা সবাই খ্যাতনামা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে , কেউ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, কেউ বুয়েটে। আমি তখন বুয়েটে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার জন্য হেলে দুলে প্রিপারেশন নিচ্ছি ; সেও আরেক বিভ্রান্তি ! আর প্রিপারেশনের ফাঁকে ফাঁকে, মন চাইলে একবেলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের ক্যান্টিনে ১২ টাকার চিকেন বিরিয়ানি খাই, তো আরেক বেলা বুয়েটের এক হলে সিনিয়র ভাইয়ের কাছে গিয়ে মডেল টেস্ট দিই।পরের তিনদিন আবার মহল্লার এক বন্ধুর বাড়ীতে তাস পিটাই।
যাই হোক ভর্তি হওয়ার পরে ক্যাম্পাসে ক্লাস শুরু হল। মনমরা করে মিরপুর থেকে রোজ ক্লাসে যাই আর ফিরে আসি। সঙ্গের স্কুল সতীর্থ হুমায়ুন কবির ওরফে লাবু উঠে পড়ে লেগে গেল ফার্মগেট এলাকার( মূলত: হলিক্রস কলেজের মোড়ের) রিকশাওয়ালাদের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ চেনানোর অপচেষ্টায়। তাই কি হয়, ট্রাক-স্ট্যান্ড পার হয়েই , রিকশাওয়ালারা ঘাড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করত, ‘মামা এইবার কই নামবেন পলিটেকনিকে ?’
পরে কি মনে করে শহীদ আজিজ হলে ১১২ নাম্বার রুমে কয়েকজন বুজুর্গ হুজুরের সঙ্গে উঠে পড়লাম।
রাতে ঘুমানোর সময় বাদ দিয়ে বাকী-সময় ঢাকা কলেজের পুরনো সতীর্থদের রুমে গিয়ে আড্ডা মারি । আর সেই সময় পলিটেকনিকের ছাত্ররাজনীতির দুর্বিষহ অবস্থা চলছে। সারাদিন কোনভাবে পার হলেও রাতে শুরু হয়ে যেত হুটোপুটি। ছাত্রদল একবার দৌড় দিচ্ছে ছাত্রলীগকে তো কিছুক্ষণ পরে তার বিপরীত চিত্র। অস্ত্রের ঝনঝনানি আর কাঁচা টাকার স্রোতে মফঃস্বল থেকে আসা পলিটেকনিকের কম বয়সী ছাত্ররা জড়িয়ে পড়ছিল নোংরা টেন্ডার-বাজির রাজনীতিতে। এঁরা আবার ছিল তেজগাঁওয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ। আমাদের টেক্সটাইলের প্রত্যেক বর্ষে আসন সংখ্যায় ছিল গোটা পঞ্চাশেক করে। বছর ঘুরে দেখা যেত আছে ৩৫/৪০ জন। আমাদের সবগুলো বর্ষ মিলে যে ছাত্র সংখ্যা, পলিটেকনিকের একটা ডিপার্টমেন্টের নতুন ছাত্রের সংখ্যাও তার চেয়ে বেশী । সুতরাং যা হয়, আমরা মেধাবী ও সিনিয়র সিটিজেন হয়েও আমাদের কৌলীন্য বজায় রাখতে পারতাম না। ওদের নোংরামির আবর্জনা এসে পড়ত শহীদ আজিজ আবাসিক হলে। মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া উপায়ও ছিল না। টিভি রুম থেকে শুরু করে , আমাদের ক্যান্টিনেও দেখা যেত ওদের অনাকাঙ্ক্ষিত চলাফেরা।
ফিরে আসি মূল প্রসঙ্গে ; কথা হচ্ছিল ক্যারিয়ার ট্র্যাক বা ক্যারিয়ার বিভ্রান্তি নিয়ে। মাঝের কয়েকবছরের টেক্সটাইলের পড়াশোনা আর অম্লমধুর স্মৃতির কথা আরেকদিন বলব। সেটার অভিজ্ঞতা বুটেক্সের যাঁরা এই লেখা পড়ছেন তাঁদের কমবেশি আছে।
তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত সবগুলো প্রধান বিষয়ে ( ইয়ার্ন, ফেব্রিক, ওয়েট প্রসেসিং, গার্মেন্টস) আমাদের যে সিলেবাস ছিল তা একজন প্রকৌশলীর ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফ্লোর চালানোর জন্য যথেষ্ট । সমাপনী বর্ষে এসে আমাদের বেছে নিতে হত অ্যাডভান্স বা স্পেশালাইজড বিষয়টি। ইদানীং অনেকগুলো বিভাগ হয়েছে জানি। আমাদের কয়েকজন তখন অধ্যাপক মাসউদ স্যারের( পরবর্তীতে তিনি বুটেক্সের ভিসি হয়েছিলেন) অন্ধভক্ত ছিলাম। মাসউদ স্যার অধুনা টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ওয়েট প্রসেসিং এক নাম্বার সাবজেক্ট হলেও আমাদের কয়েকজন বেছে নিলাম মাসউদ স্যারের ফেব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং টেকনোলজিকে। সত্যি কথা বলতে কি , শেষ বর্ষের মাসউদ স্যারের ওই অ্যাডভান্স স্পেশালাইজড ক্লাসগুলোর টেকনিক্যাল গভীরতা আগের বছরের ফাঁকি দিয়ে বেড়ানো , অবহেলিত ক্লাসের বেদনা ভুলিয়ে দিতে পেরেছিল। মনে হয়েছিল হ্যাঁ, আমরা এইবার সত্যিকারের টেকনোলজি শিখছি। স্যারের ক্লাস নেওয়ার মধ্যে তথ্যের দক্ষতা , মুগ্ধ করে রাখার ও মোটিভেট করার দারুণ একটা সমন্বয় ছিল। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো স্যারের কথা গিলতাম।
ক্যারিয়ার নিয়ে কাহিনী শুরু হল, ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার আগে থেকেই। তখনকার প্রচলন বা ট্রেন্ড ছিল কে কোথায় চাকরি করবে সেটা নিয়ে ফাইনাল পরীক্ষার আগেই ঠিকঠাক হয়ে যেত। মিল ট্রেনিং এর সময়ে অনেক বড়ভাই, আমাদের কাউকে পছন্দ হলে আগে ভাগেই তাঁকে বলে রাখতেন তাঁর টেক্সটাইলে যোগদান করতে। সুতরাং আমদের ৬০ ভাগ ছেলের কে কোথায় যোগ দিচ্ছে সেটা রেজাল্ট পাবলিশ হওয়ার আগেই ঠিক হয়ে যেত। বাকী ছিলাম আমাদের মতো ৪০ ভাগ যারা ছিলাম পুরোপুরি বিভ্রান্ত। এই বিভ্রান্তরা বিভিন্ন সময়ে নানা সিনিয়র ভাইদের সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করতাম কোথায় প্রসপেক্ট বেশী। মুশকিল হচ্ছে সফল বড়ভাইদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আমাদের বিভ্রান্তি যেত বেড়ে। ‘আরে মিয়া হুদাই বইয়া রইছ ক্যা , যাও যাও ! নিটিং- এ জয়েন কর !ওইখানে তো কেউ নাই টেক্সটাইলের। ফিল্ড এক্কেবারে ফাঁকা।’ আরেকজন বলত, ‘আরে ধ্যাত ! উইভিং এ যাও। পাকিস্তানি মূর্খ ফিটাররা বড় বড় সুলজার রোটি, রেপিয়ার আর প্রজেক্টাইল লুম চালাচ্ছে। এখনতো আবার এয়ার জেট ওয়াটার জেটের মতো অত্যাধুনিক লুমও চলে আসছে। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বড়বড় ফ্লোরে কাজের মজাই আলাদা!’ ‘ আরে প্রিন্টিং এ জয়েন কর। শ্যামলদারে দেখ কই গেছে গিয়া!’ ‘ আশ্চর্য, তোমরা ডেনিম প্ল্যান্টে জয়েন করতেছ না কেন ? জানো ডেনিমের ভবিষ্যৎ কতো উজ্জ্বল বাংলাদেশে !’ ‘ সোয়েটারে বা ফ্ল্যাট নিটিং এ টেকনিক্যাল লোক নাই, গুচ্ছের অশিক্ষিতদের দিয়ে প্রোডাকশন চলছে , ওই খানে যাও!’ ডায়িং ফিনিশিং এর কথা বলতে হত না, কারণ সেটা ছিল সেই সময়ের সর্বোচ্চ চাহিদার। ৯০ এর দশকে একটার পর একটা নিট কম্পোজিট হচ্ছে, বছর দুয়েকের সিনিয়র বড় ভাইয়েরা ঝকঝকে টয়োটা গাড়ীতে যাতায়াত করে। মাস শেষে ৩০-৪০ হাজার টাকা বেতন পায়। সো, প্রতি ব্যাচের সবচেয়ে মেধাবী ছেলেগুলো নিট কম্পোজিটে যোগ দিচ্ছিল। কিছুটা অবহেলিত ছিল স্পিনিং বা ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরটা। স্পিনিং কারখানাগুলো অনেক দূরে দূরে। তুলার ডাস্ট আর মেশিনের আওয়াজ মিলিয়ে কর্ম পরিবেশ সম্পর্কিত অভিযোগ ছিল সবার।
তো বিভ্রান্ত কয়েকজনের একজন এই আমি, এদিক সেদিক ঘোরাফেরা করে এক মাস এইখানে দুইমাস ওইখানে চাকরি করে অবশেষে বেক্সিমকো টেক্সটাইলে এসে থিতু হলাম। আমার ক্যারিয়ার কাহিনী শুরু হল। প্রি-ট্রিটমেন্ট নামের এক ডিপার্টমেন্টে বিশাল আজদাহা টাইপের কয়েকটা ভয়ংকর মেশিনের ভয়ংকর তাপমাত্রার ও হাত ক্ষয় করা লিকুইড কস্টিকের ফ্লোরে শুরু হল আমার জীবন। আমার বস ছিল দুইজন। ছোটজন জাভেদ আর বড়জন খায়ের। দুইজনেই পাকিস্তানের ইম্পোর্টেড। এঁরা সবার সঙ্গে ভাঙ্গা বাংলা ও হিন্দি- উর্দু মেশানো ভাষায় কথা বলত। আমি যদিও অবাঙ্গালী বিহারী অধ্যুষিত মিরপুরে বড় হয়েছি এবং আমার উর্দু ও হিন্দি ভাষাজ্ঞান অনেকের চেয়ে ভাল ; কিন্তু আমার মধ্যে কিছুটা পাকিস্তান বিদ্বেষ ছিল! আমি এমন ভাব দেখাতাম যে আমি উর্দু –হিন্দি কিছুই বুঝিনা। ওটা ছিল আমার বিখ্যাত ঘাড়ত্যাড়ামি। সেই ঘাড়ত্যাড়ামির মাশুল আমাকে জীবনে কয়েকবার দিতে হয়েছে। দুঃখজনক-ভাবে সেই ঘাড়ত্যাড়ামি আমার মধ্যে এখনো আছে। আমার কথা সহজ, বাংলাদেশে কাজ করতে এসেছ ; হয় বাংলায় কথা বল নইলে ইংরেজিতে । মধ্যবর্তী অন্য কোন ভাষা কেন বলছ বা আমাদেরকে দিয়ে বলাতে চাচ্ছ?
দিন যায় রাত আসে। মাসের পর মাস যায়। শিফটিং ডিউটির প্যাড়া আচ্ছন্ন করে রাখে আমাকে। রাতে সবাই যখন হুমায়ূন আহমদের নাটক দেখতে বসে , আমি তখন গোছগাছ করে সরাবো,গাজীপুরের বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে যাই ‘সি’ শিফটের ডিউটি দিতে। আবার ‘এ’ শিফটের ডিউটি সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা । ঐ শিফটের ডিউটি ধরতে মাঝরাতে চোখ কচলাতে কচলাতে ঘুম থেকে উঠি কি উঠি না । আম্মা আবার না খেয়ে বাসা থেকে বের হতে দিতেন না ! অতো ভোরে কাঁচাপেটে কিছু খেতে ভালো লাগে ? তবে বেক্সিমকো তে অফিসার ক্যান্টিনের খাওয়া দাওয়া ছিল দুর্দান্ত ! সেটা উপভোগ করতাম প্রায়শ:
শিফটিং ডিউটি আমার কাছে মোটেও ভাল লাগতো না। সারারাত জেগে দিনের আলোতে ঘুম আসতো না। আবার ঝিমঝিম ঘুম আসার সময় হলেই দেখা যেত শিফটিং ডিউটির বেক্সিমকোর মাইক্রো-বাস ধরতে হুড়োহুড়ি করে বাসা থেকে বের হচ্ছি। অনেক সময় সিনিয়র ভাইদের জেনারেল শিফট গাড়ীতে বিকালের দিকে চলে আসতাম। এক বড়ভাইয়ের বাসা ছিল মোহাম্মদপুরের দিকে। গাড়ী তাঁকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নামিয়ে দিয়ে মিরপুরের দিকে আসত। আমি অনেকদিন চন্দ্রিমা উদ্যানে নেমে যেতাম। লেকের পাশে বসে জীবনের হিসাব মেলাতে পারতাম না। এ আমি কি করছি ? গভীর রাতে কতগুলো বিশাল যন্ত্রের সামনে বসে বসে সময় পার করছি। রেসিপি দিচ্ছি, ঘনত্ব মাপছি। কাপড়ের সমস্যা হলে অপারেটরকে খুঁজে হয়রান হচ্ছি। একটা বদ অপারেটর ছিল, নাম ভুলে গেছি। ঠিক ঠিক কাজের সময়ে একে খুঁজে পাওয়া যেত না। আমরা নতুন প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়াররা এই সব বদ ও পুরনো অপারেটরের উপরে চোটপাটও করতে পারতাম না। কারণ ওই নির্দিষ্ট মেশিন সে হয়তো গত ৪/৫ বছর ধরে চালাচ্ছে ; সে জানে কোন রোলারে বা কোন চেম্বারে সমস্যা আছে। আমি তো ঘোড়ার ডিমও জানি না। তো সেই বদ অপারেটরকে বহুদিন লোক পাঠিয়ে ধরে আনতে হয়েছে পাশের ডেনিম প্ল্যান্ট থেকে। ওখানে কোন আদিবাসী মেয়ের সঙ্গে নাকি তাঁর ভাব-ভালোবাসা।
এইভাবে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আমি হতোদ্যম হয়ে পড়লাম। চন্দ্রিমা উদ্যানে বসে বাদাম খাই, চা সিগারেট খাই আর ভাবি। বন্ধুরা সব কে কোথায়। মোবাইলের যুগ না , যে সুখ দুঃখের কথা বলতে পারব ! কেউ আছে, ভালুকা ময়মনসিংহ, কেউ নরসিংদী, কেউ চট্টগ্রামে, কেউ গাজীপুরে কেউ নারায়ণগঞ্জে !
এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম দরকার নাই আমার ডায়িং ফিনিসিং এর মোটা বেতনের। আমি যে কোন একটা জেনারেল শিফট ডিউটি হলেই বর্তে যাই। রাতে ঘুমিয়ে সকালে অফিস করতে পারাটাই আমার জীবনের প্রধানতম মোক্ষ হয়ে দাঁড়ালো। আমার যেহেতু ইয়ার লস ছিল, আমার ঢাকা কলেজের সতীর্থ ১৯ ব্যাচের সজল ছিল বন্ধু। ওর সঙ্গে সঙ্গে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ার জালালও ঘনিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল। জানতাম জালাল, স্বরূপদা, ও আমাদের ২০তম ব্যাচের গার্মেন্টস টেকনোলজির কয়েকজন ওপেক্স গ্রুপে মার্চেন্ডাইজিং করছে। আমি আবার মার্চেন্ডাইজিং সম্বন্ধে বিন্দুবিসর্গ জানি না। এঁদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে আমাকে জেনারেল শিফট ডিউটির একটা কিছু ম্যানেজ করে দিতে বললাম। জেনারেল শিফট ডিউটি ছিল হয় ডাইজ-কেমিক্যালস (রং ইত্যাদি) এর মার্কেটিং অথবা গার্মেন্ট মার্চেন্ডাইজিং।
অনেকখানি বিভ্রান্তি নিয়ে ফাঁকি দিয়ে একদিন গেলাম ওপেক্স গ্রুপের হেড অফিসে। কর্নেল (অবঃ) ফরিদ স্যারের সঙ্গে দেখা করব। সকাল সকাল গিয়ে হেড অফিসের রিশিপসনে বসে আছিতো, বসেই আছি। সকাল গড়িয়ে দুপুর , ক্ষুধায় পেট জ্বলছে, বাইরে গিয়ে কিছু খাব তাও যেতে পারছি না; কখন ফরিদ স্যার ডেকে বসেন। তো , বসে থাকার এক পর্যায়ে গ্রে মিল্যাঞ্জ কালারের কাঁচাপাকা চুলের এক ভদ্রলোক রিশিপশনে ঢুকলেন। সবাই বেশ সম্ভ্রমের সঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়ল। আমি যেহেতু তাঁকে চিনিনা ; সুতরাং আমি সোফাসেটে বসেই থাকলাম। পরে রিশিপশনের মেয়েটি তাঁকে ফোনে ধরিয়ে দিলেন সিনহা টেক্সটাইলের তখনকার সর্বেসর্বা মাহি আলম সাহেবের সঙ্গে কথা বলার জন্য। আমি মাহি আলম নামটি চিনি ভালোমতোই, কেননা তিনি আমাদের টেক্সটাইলের প্রথমদিকের সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার বড়ভাই। ঘটনা হচ্ছে, ওই কাঁচাপাকা চুলের ভদ্রলোক ফোন ধরে মাহি আলম সাহেবকে ‘তুমি’ সম্বোধন করে ভ্যাট ডাইং এর উপকারিতা ও অপকারিতা বোঝাচ্ছিলেন। যেহেতু ওপেক্স বিশাল একটি প্রতিষ্ঠান এবং আমি নবীন প্রকৌশলী ; সকল টেক্সটাইল সিনিয়র ভাইদেরকে আমি চিনিও না। আমি ওই ভদ্রলোক ও মাহি আলম সাহেবের কথোপকথন শুনে ধরেই নিলাম উনিও আমার স্বজাতি কোন সিনিয়র টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হবেন। উনি উপরের তলায় চলে যাওয়ার পরে আমি রিশিপশনিস্টকে জিজ্ঞেস করলাম উনি কে ? রিশিপশনিস্ট বেশ বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, উনিই সিনহা স্যার; আমি ঢোক গিললাম। তাহলে ইনিই সেই কিংবদন্তি ক্যাপ্টেন আনিসুর রহমান সিনহা ?
শেষ বিকেলে খুব হেলাফেলায় ডাক পড়ল কর্নেল ফরিদ স্যারের রুমে। কাগজপত্রে সাইন করতে করতে উনি চশমার ফাঁক দিয়ে আমাকে পরিমাপ করতে করতে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন কেন আমি প্রোডাকশন ছেড়ে মার্চেন্ডাইজিং এ আসতে চাচ্ছি। আমি আকাশপাতাল চিন্তা করতে করতে ভাবছিলাম কি বলা যায়। আমার উত্তরের আগেই উনি আমাকে অফার দিলেন, আমি যেন আমি সিনহা ওভেন ডাইং এ যোগ দিই, ওখানে লোক লাগবে। আমি ইতস্তত করছি দেখে উনি সাহস দিলেন, সত্যি কথা বলতে। আমি তাঁকে বোঝালাম যে, আমি মূলত: জন্মসূত্রে ঢাকার। আমি দীর্ঘদিন প্রোডাকশনে কাজও করেছি। কিন্তু দূরত্বের চেয়েও বড় যে ব্যাপারটি আমাকে পীড়া দিচ্ছে সেটা হচ্ছে শিফটিং ডিউটি এবং কাজের পরিবেশ। উনি চোখ দিয়ে আবার প্রশ্ন করলেন, মানে আমি যেন আরও বিস্তারিত বলি। আমি নিজের মনে বলে চললাম, আমি চাই জেনারেল শিফট ডিউটি। আমি চাই, কিছু শিক্ষিত লোকের সঙ্গে আমার অফিস-টাইম ব্যয় করতে। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি প্রোডাকশনের চেয়ে পিপল ম্যানেজমেন্ট ও মার্কেটিং এ ভাল করতে পারব। আরও কিছু হিজিবিজি ধুনুফুনু বলেছিলাম, সব কথা মনেও নাই।
উনি বোঝালেন, হ্যাঁ মার্চেন্ডাইজিং এ জেনারেল শিফট ডিউটি , কিন্তু ঢোকার সময় ঠিক থাকলেও বের হওয়ার সময়ের কিন্তু ঠিক নেই ! সব কথা শোনার পর, উনি ফোনে মেজর( অবঃ) সুনীল স্যারকে ডেকে পাঠালেন তাঁর রুমে। বললেন , আমার একটু মৌখিক লিখিত পরীক্ষা নিতে। ফরিদ স্যারের পাশের একটা বড় কনফারেন্স রুমে সুনীল স্যার কয়েকটা সাদা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললেন, রেমেডিস অফ ট্রাফিক ইন ঢাকা( Remedies of Traffic in Dhaka) —এই সম্বন্ধে লিখতে। যাহ্ বাপস্ ! আসছি মার্চেন্ডাইজিং এর পরীক্ষা দিতে , টেক্সটাইল প্রকৌশলী। এর সঙ্গে ঢাকার ট্রাফিকের কি সম্পর্ক সেটা ভেবে তব্দা খেয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকলাম। আর ঢাকার ট্রাফিকের অচলাবস্থা নিয়ে কত রথীমহারথী চিন্তা করে হিমসিম খাচ্ছে আমি কোন হরিদাস পাল ? যাই হোক পরীক্ষা বলে কথা। গোটা গোটা অক্ষরে ইংরেজিতে কী যে লিখেছিলাম দুই পাতা ভরে সে আর মনে নেই ।
লিখে বসে আছি তো, আছিই। সুনীল স্যারের পাত্তা নেই। উনি ঘণ্টা দুয়েক পরে এসে খাতা নিয়ে ফরিদ স্যারের রুমে গেলেন। মিনিট দুয়েক পরে ফিরে এসে বললেন, কবে জয়েন করতে পারব ? আমি সপ্তাহ দুয়েকের সময় চেয়ে নিলাম। আমি আনাড়ি নতুন প্রোডাকশন অফিসার ; আমি ফ্লোরে থাকলেই কি আর না থাকলেই বা কি! আমাকে ছাড়া বেক্সিমকো এতদিন যেহেতু চলেছে, আগামীতেও চলবে। নানা বিভ্রান্তি কাটিয়ে দিলাম ইস্তফা চাকরিতে। তো বেক্সিমকোর সমস্যা ছিল সেই সময়ে এঁরা তিন মাস পরে বেতন দিত। আমার পাওনা তিন মাসের বেতন আমি যথারীতি ছয়মাস পরে ব্যাংকের মাধ্যমে হাতে পেলাম। আমার টেক্সটাইল প্রোডাকশন জীবনের ওইখানেই ‘মধুরেণ সমাপয়েৎ’ ঘটে গেল। আমার আর প্রকৌশলী হওয়া হল না। বাকী জীবন মার্চেন্ডাইজিং, মার্কেটিং আর অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়েই কাটিয়ে দিচ্ছি।
আমাকে এখনও মাঝে সাঁঝে ইন্টারভিউ বোর্ডে বসতে হয়। নবীন প্রজন্মের প্রকৌশলীদের সঙ্গে যখন ক্যাজুয়াল মুডে থাকি, বলি আমি যেহেতু তোমাদের অনেকক্ষণ প্রশ্ন করলাম ; ইন্টারভিউ শেষে তোমাদের মনে আমার বা আমি যে প্রতিষ্ঠানে আছি তাঁদের সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে করতে পার। উভয়পক্ষের সমানাধিকার! সাধারণত: এঁরা নিজেদের সুযোগ সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন করে। কি ধরণের প্যাকেজ , কয়দিনের ছুটি, প্রফিট শেয়ার আছে কিনা ইত্যাদি।
এর মধ্যে একদিন এক চাকরীপ্রার্থী আমাকে খুব স্পর্শকাতর একটা প্রশ্ন করে বসল। সে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি কেন এই তীব্র শারীরিক ও মানসিক শ্রমের মার্চেন্ডাইজিং পেশায় আছেন। আপনার কি মাঝে মাঝে এই পেশা ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে না?’ আমি হাসি হাসি মুখ করে মার্ক টোয়াইন বা আর্নেস্ট হেমিং ওয়ের একটা অপ্রচলিত মন্তব্য তাঁকে শোনালাম। সাংবাদিকের প্রশ্নোত্তরের এক পর্যায়ে তিনি নাকি স্বগতোক্তি করেছিলেন, ‘আমি জীবনের এক পর্যায়ে এসে বুঝতে পারলাম আসলে আমি লেখালেখির কিছুই জানি না!’ সাংবাদিক তাঁকে উল্টো প্রশ্ন করলেন, ‘ তাহলে লেখালেখি ছেড়ে দিলেন না কেন?’ তাঁর উত্তরটা মজার ছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘আসলে লেখালেখি ছাড়ার কথা ভেবেছিলাম কয়েকবার ; কিন্তু দেখলাম ততদিনে আমি বেশ বিখ্যাত হয়ে গেছি। তাই আর ছাড়া হয়ে ওঠেনি !’ আমার অবস্থাটাও কাছাকাছি । এই হৃৎপিণ্ড কাঁপানো পেশার কথা কয়েকবার ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করিনি যে , তা না। তবে, দেড়যুগ এই পেশায় কাটিয়ে দেখলাম , আমি একটা অবস্থানে এসে পৌঁছেছি! ছেড়ে আর কী হবে !
আরেকদিন আমার এক অনুজ কলিগের সংগে কথা হচ্ছিল। সে তাঁর পেশাগত জীবনের সাফল্যের হিসাবে আমার অন্তত: পঞ্চাশগুণ ভালো অবস্থায় আছে। কিন্তু সমস্যা একটাই, মারাত্মক প্রেশার নিয়ে কাজ করতে হয় তাঁকে। মাত্রাতিরিক্ত কাজের চাপে তাঁকে বেশ কয়েকবার ডাক্তারেরও শরণাপন্ন হতে হয়েছে। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম , ‘এতো প্রেশার নিয়ে কাজ করছ কেন? তোমার কি এই পেশা ছেড়ে দিতে ইচ্ছে ইচ্ছে করে নাকি?’ সে স্মিত হেসে দারুণ একটা উত্তর দিয়েছিল। বলেছিল, ‘জাহিদ ভাই, এই পেশা আমার রক্তের মধ্যে ঢুকে গেছে। এই পেশাই আমার জীবন হয়ে গেছে। আমি যেমন জীবন থেকে পালাতে পারব না। আমাকে এটা মাথা উঁচু করে সামনাসামনি দাঁড়াতে হবে, টেক্সটাইল গার্মেন্ট পেশার ক্ষেত্রেও তাই। I can’t quit my life !’
বহুদিন আগে, আমাদের কোম্পানির শ্রদ্ধেয় সিইও মাইকেল কোহ্ একটা রেস্তরাঁয় বসে ক্যাজুয়াল মুডে আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। আমাদের কয়েকজন সিনিয়র ম্যানেজারদের বিধ্বস্ত চেহারা দেখে পাশের জনকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি হয়েছে?’ যথারীতি ওই ম্যানেজার কাজের ও অকাজের প্রেশারের কথা বললেন।তাঁর শারীরিক সমস্যা, ব্লাড প্রেশার, কোলেস্টরেল ইত্যাদির কথা বলে গেলেন। আসলে টেক্সটাইল বা গার্মেন্টস ট্রেডে যে মানসিক চাপ সেটা প্রায়শ: সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। ব্যবসার কম্পিটিশন, অর্ডারের কমতি, অতিরিক্ত অর্ডার, বায়ারের অযাচিত ডিসকাউন্ট, এয়ার শিপমেন্ট, সাপ্লাই-চেনের নানা লেভেলের অদক্ষতা ও অসহযোগিতা ইত্যাদি ইত্যাদি। সিইও মন দিয়ে শুনে যা বললেন- তিনিও ৩৫ বছর আগে অন্য ব্যবসা ছেড়ে টেক্সটাইলের ব্যবসায় যখন আসেন, কিছুদিনের মধ্যেই উনি টের পেলেন এই পেশার কাজের চাপের। উনি হতোদ্যম হলেন না। নানা ঘাতপ্রতিঘাতের মাঝখান দিয়ে উনি এখন বিশাল এক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। উনি আরও বললেন, ৩৫ বছর আগেও টেক্সটাইলে যে কাজের চাপ ছিল , তাঁদের যে অভিযোগ ছিল, তা এখনো আছে। আরও ৩৫ বছর পরে যে প্রজন্ম আসবে তাঁদেরও এই একই অভিযোগ থাকবে ! মোদ্দা-কথা , টেক্সটাইল গার্মেন্টস ট্রেডের এটাই অকৃত্রিম চেহারা। যুগ বদলালেও কাজের ধরণের তেমন কোন হেরফের হবে না ! তাই এটাকে মেনে নিয়েই এই পেশায় থাকতে হবে।
ব্যক্তিগত ভাবে , ক্যারিয়ারের ব্যাপারে আমি সবাইকে আশাবাদী হতে বলি। একটা সময় ছিল, টেক্সটাইল থেকে পাশ করে এই শিল্প ছাড়া অন্য কোথাও কিছু করার চিন্তাও করত না কেউ। অধুনা নবীন প্রজন্মের অনেকে সরকারী চাকরিতে ঢুকছেন। বিসিএস দিয়ে পুলিশ, প্রশাসনে ঢুকছেন। কেউ কেউ সফটওয়ার ব্যবসায় সফল হচ্ছেন। একটা বিষয়ে যখন মেধাবী গ্রাজুয়েটের সংখ্যা বেড়ে যায় কর্মসংস্থানের তুলনায়, তখন তাঁদেরকে ছড়িয়ে পড়তে হয় আরও নানা বহুমুখী সেক্টরে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে সবাই কিন্তু কৃষি অফিসার হচ্ছেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে সবাই কিন্তু পদার্থবিদ, রসায়নবিদ হচ্ছেন না। যেহেতু , বিষয়ভিত্তিক কর্মসংস্থানের সংকুলানে চাপ আছে ; নবীন প্রজন্মের গ্রাজুয়েটদেরকে আই ই ( ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং) ; কোয়ালিটি কন্ট্রোল সহ নানা বহুমুখী সেক্টরে ঢুকতে হবে। শুধুমাত্র ডাইং ফিনিসিং বা মার্চেন্ডাইজিং এর কথা চিন্তা না করে অন্য সেক্টরে নিজেদের যোগ্যতা দেখাতে হবে।
ধৈর্য ধরে আমার ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার বিভ্রান্তি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
প্রকাশকালঃ ১লা ডিসেম্বর,২০১৬
সাম্প্রতিক মন্তব্য