১। কর্পোরেট দুনিয়ায় আপনাকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার চেষ্টা করে যেতে হবে। সমান পরিশ্রমী হলেও , এক শ্রেণী আছে যারা ডিমপাড়া মুরগীর মতো প্রতিটি প্রাত্যহিক ডিম-প্রসবের পরপরই সমস্ত কোম্পানির মালিকপক্ষ থেকে শুরু করে, ড্রাইভার –দারোয়ানদেরকেওকে জানিয়ে দেয় সদ্যই ডিম পাড়া হয়েছে। পাইপলাইনে আরো ডিম আছে। এরা একটা এক্সট্রিম শ্রেণী। মধ্যপন্থীদের কথা বাদ দিলে — আরেকদল নরমপন্থী আছে যারা ডিম পেড়ে খাঁচা ভরে যাওয়ার অপেক্ষা করে । ভাবতে থাকে , এটাতো তার দায়িত্বই ছিল। একইসঙ্গে তাঁরা এই আশাবাদও পোষণ করতে থাকে–উর্ধ্বতনেরা এসে তাঁকে সাধুবাদ জানাবে ! আফসোস –Everybody cares about barking dogs ; either it bites or not !
২। বহুবহু বছর আগে কথা ! আমাদের এক সতীর্থ বন্ধুর প্রথম চাকরি ও টাইটেলের কাহিনী। আমরা সদ্য পরীক্ষা শেষে এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছি ; সেই সময়ে সে খোঁজ দিল তার চাকরি হয়েছে নারায়ণগঞ্জের একটা নিট কম্পোজিটে। টেক্সটাইল কারখানায় সেই সময়ে ওপেনিং পজিশন ছিল প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ার। সে তার ভিজিটিং কার্ড দেখালো , টাইটেল হচ্ছে ED ( এক্সিকিউটিভ ডিরেকটর )! আমরা সবাই বিস্ময়ে হতবাক ও মনেমনে মর্মাহত ! ক্যাম্নে কি ? জিজ্ঞাসাবাদে সে বের হল, মালিক তেমন শিক্ষিত না । ভিজিটিং কার্ডে কি টাইটেল লিখবে সেটা জিজ্ঞাস করায়, মালিক নাকি উত্তর দিয়েছে, ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছাড়া যে কোন একটা কিছু লিখে নিতে ! বন্ধু আমার প্রথম চাকরিতেই এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর !
ভুলে যাবেন না, কর্পোরেট চাকরির হচ্ছে পিরামিডের মতো, উর্ধ্বমুখী টাইটেল ও বেতনের সাথে সাথে পিরামিডের উপরের দিকে নড়াচড়ার পথ সরু হয়ে যায় ! একটা টাইটেল নিতেই পারেন বা পেতেই পারেন, কিন্তু ওই টাইটেলে কেউ নিজেকে যদি আমার সেই বন্ধুটির মতো করে ফেলেন, তাহলেই মারা !
৩। প্রায়শঃ দীর্ঘদিনের কর্মচারীদের ধারণা হয় যে, মালিকরা মনে হয় তাঁদেরকে পরিবারের মত ভাবে ! কোন কারণে পুরাতন কর্মচারীরা উর্ধতনদের উপরে ক্ষুদ্ধ, অভিমানী হয়ে পড়লে সে আশা করে বসে, ব্যাপারটা হয়তো সমানুপাতিকভাবে উর্ধ্বতন বা মালিকপক্ষকেও চিন্তিত করছে। বাস্তবতা হচ্ছে—না করছে না ! আপনি কর্মচারী হলে আপনার কোন একটা বঞ্চনার অভিমান নিয়ে আপনি দিনে দশবার চিন্তা করতেই পারেন, মালিকের কিন্তু অতখানি সময় নেই সেটা সপ্তাহে বা মাসে একবার চিন্তা করার ! সুতরাং স্বামী-স্ত্রীর মান-অভিমান যদি হয় সমানুপাতিক , তবে মালিক কর্মচারীর মান-অভিমানের টানাপোড়েন বিপরীতভাবে ব্যস্তানুপাতিক।
৪। প্রতিটি শাশুড়ি ভুলে যান তাঁরা একসময় বৌমা ছিলেন ! ঠিক যে ব্যবহার তিনি পেয়েছেন, মনে মনে ভাবেন তিনি ভালো শাশুড়ি হবেন । কিন্তু যা হওয়ার তাই হয় ! উনি তার শাশুড়ির চেয়েও একপ্রস্থ নিম্নগামী হন ! অনেক নতুন মালিক বা ম্যানেজারদের সমস্যা তাঁরা চিন্তায় পড়ে যান , তাদের অধীনস্থদের সাথে কী ধরণের ব্যবহার করবেন? আসলে ঠিক সেই ব্যবহারটাই করা উচিৎ , যেটা আপনি আপনার উচ্চপদস্থদের কাছ থেকে আশা করে থাকেন। সময়মত আপনার অধীনস্থকে যেমন প্রশংসাও করতে হবে আবার তিরস্কারে সময় তিরস্কারও ।
অন্যদিকে , নতুন কর্মচারী হিসাবে আপনি কি ধরণের আচরণ করবেন উর্ধ্বতনের সাথে ? সহজ উত্তর, আপনি আপনার অধীনস্থদের কাছ থেকে যে রকমটি আশা করেন সেটাই ! আপনি নিজেওতো হালকা তেলের সাথে আপডেট থাকতে ও নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে ভালোবাসেন। কয়েকজনের মাঝে যে আপনাকে সবসময় আপডেট দেয়, তাঁকেই তো আপনার পছন্দ। যে অধীনস্থ আপনাকে প্রশংসা করে, তার ব্যাপারে সুনজর আছে আপনার । যে কর্মচারী আগ বাড়িয়ে সালাম দেয় , সে আপনার ঘনিষ্ঠ ! তো আপনাকেও ঠিক সেই কাজগুলিই করতে হবে , যেটা আপনি নিজেও পছন্দ করেন !
৫। কিছু বস আছে , অধীনস্থদের দৌড়ের উপরে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। একটা ই-মেইল ডাউনলোড হওয়ার আগেই , সে আপনাকে ফলোআপ করা শুরু করে। সেইসব বসকে ‘বশ’ করার জন্য আমার একটা আলাদা নিয়ম ছিল। নিতান্তই ঠেকায় পড়ে আবিষ্কার করতে হয়েছিল। সাধারণত এই শ্রেণির বসেরা কমফোর্ট জোনে থাকতে চায়,আপডেটেড থাকতে চায়; একটা কাজ দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারে না, নিজেও টেনশন করতে থাকে। তো, এই শ্রেণীর বস , ক্ষণে ক্ষণে খবর নেয়, কি অবস্থা ,কতদূর ? এদেরকে ঠান্ডা রাখতে হলে , নিয়মিত ইনফর্মেশন দিতে হয়। এবং ইনফর্মেশন ওভারফিড (overfeed ) করতে হয়। আপনি গত কয়েক ঘন্টায় কী কী করেছেন এবং আগামী কয়েকঘন্টায় কী কী করবেন তা যদি নিয়মিত প্রতিদিন রুটিন করে জানাতে থাকেন, মাস দুয়েকের মধ্যেই আপনার বস আপনার ব্যাপারে পুরোপুরি আস্থাশীল হয়ে উঠবেন, আপনার ঘাড়ের কাছে সারাক্ষণ নিঃশ্বাস ফেলে বার বার কাজের অগ্রগতির কথা জানতে চাইবেন না
প্রকাশকালঃ ২রা আগস্ট,২০১৬
সাম্প্রতিক মন্তব্য