কর্মক্ষেত্রে কাকে নিজের কাছাকাছি বা দলে রাখবেন বা কার পক্ষে আপনি খেলবেন ; আর কাকে আপনি প্রতিপক্ষ বানাবেন সেটি খুব স্পর্শকাতর ও দীর্ঘমেয়াদী জটিল সিদ্ধান্তের ব্যাপার। সিদ্ধান্তের সামান্য ভুলে আপনাকে পস্তাতে হতে পারে ; সুতরাং ভেবেচিন্তে পক্ষ-বিপক্ষ স্থির করা ভাল। আমার মতে , অনর্থক শক্তিশালী কাউকে প্রতিপক্ষ না বানানোই আখেরে আপনার জন্য ভাল।
একটা উপমা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করি। ১৯৯২ সালে ইমরান খানের নেতৃত্বে পাকিস্তান ওয়ান ডে ক্রিকেটের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। বিশ্বকাপ জেতার পরে ট্রফি হাতে ইমরান খানের সেই বিখ্যাত আবেগ-ঘন সমাপনী বক্তব্য আমার এখনো মনে আছে। খেলোয়াড় জীবনের গোধূলি লগ্নে এসে ইমরান খান ও শচিন টেন্ডুলকার দু’জনেই তাঁদের চির আরাধ্য বিশ্বকাপ ছুঁতে পেরেছিলেন।
শোনা কথা; সূত্র মনে নেই।
তো সেই ইমরান খানকে তাঁর খেলোয়াড় জীবনের মধ্যগগণে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘পাকিস্তানের হয়ে খেলার সময়ে কখন নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন আপনি ?’ইমরান খান সাংবাদিককে হাসিহাসি মুখে উত্তর দিয়েছিল, ‘আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের দেখে ! কারণ তাঁদেরকে ওয়াসিম আকরাম আর ওয়াকার ইউনুসের মতো বোলারকে সামলাতে হচ্ছে ; আর আমাকে তা করতে হচ্ছে না !’
উল্লেখ্য, ওয়াসিম আকরাম আর ওয়াকার ইউনুস ছিলেন পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণভাগের মূলশক্তি। প্রায়শ: দুই প্রান্ত থেকে এঁরা বোলিং শুরু করে ডাকসাইটে ব্যাটসম্যানদের অস্বস্তিতে ফেলে দিত। এঁদের দুজনকে ভাষ্যকারেরা আদর করে ‘টু ডব্লিউ’ বলে ডাকতেন ! এঁদেরকে নিজের দলে পেলে যে কোন ক্যাপ্টেন গর্ব করে এই কথা বলতেই পারেন। চোখে ভাসছে , নব্বই এর দশকে ওয়াসিম আকরামের এক ওভারের ছয় রকমের ইনসুইং আউটসুইং ফাস্ট বোলিং ! আমরা যারা ক্রিকেট ভক্ত ছিলাম, ওয়াসিম আকরামের এই বোলিং বৈচিত্র্য আমাদের অবাক করত। আর ওয়াকার ইউনুসের বিধ্বংসী গতির বোলিং আর ফুল লেন্থ্ ইয়র্কার অনেক দাপুটে ব্যাটসম্যানের শিরঃপীড়ার কারণ ছিল।
কর্মক্ষেত্রে আপনি যদি সত্যিকারের দক্ষ ব্যাটসম্যান হন তাহলে ওয়াসিম আকরাম বা ওয়াকার ইউনুসের বিপক্ষে খেলতেই পারেন । কিন্তু ভালো হয়, যদি তাঁদেরকে নিজের দলে রাখতে পারেন !
সাম্প্রতিক মন্তব্য