কিছুদিন আগে প্রথম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকে অক্ষর পরিচয়ে ‘ও’ অক্ষরের জন্য ‘ওড়না চাই বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। বছরের শুরুতে প্রাচীন ও প্রগতিশীলদের মধ্যে শুরু হয়েছে বাদানুবাদ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যে কোন ইস্যু নিয়ে হৈচৈ দুই-একদিনের বেশী থাকে না। এখন যেহেতু ব্যাপারটা সবাই ভুলে যেতে বসেছে , আমি আমার কর্পোরেট অবজার্ভেশনে ওড়না ও নারীদের কর্ম পরিবেশ নিয়ে দুয়েক কথা বলতেই পারি।
পারিবারিক মূল্যবোধ থেকেই কন্যা-শিশুদেরকে ওড়না ও ওড়না দিয়ে বুক ঢেকে রাখার ব্যাপারটা শেখানো হয়। পুরো ব্যাপারটি নারীর দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকত্ব, তাঁর নিরাপত্তাহীনতা, ধর্মীয় অনুশাসন ও মা-খালাদের অতীত তিক্ত অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণে হয়ে থাকে। আমাদের অবদমনের পুরুষ শাসিত সমাজে একজন বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বেশ একটা অদ্ভুতুড়ে উপায়ে তৈরি হয় । প্রথমত: যৌনতা ও তার যে কোন আলোচনা আমাদের সমাজে নিষিদ্ধ ও ট্যাবু। আগেও ছিল , এখনো এই মুক্ত অন্তর্জালের সময়েও আছে। দ্বিতীয়ত: নারী-শিশুটি যে নিজের পরিবারের পিতা ও ভাই ছাড়া পৃথিবীর অন্য সকল পুরুষের কাছে অনিরাপদ সেটা মা, খালারা গ্রামের একটি শিশুকে শিখিয়ে পড়িয়ে দিতে একদম দেরী করেন না।
একই সঙ্গে গ্রামের একটি ছেলে কীভাবে যেন জেনে ফেলে– অকর্মণ্য , অপদার্থ পুরুষ হলেও, শুধুমাত্র পুরুষ হওয়াও একটা বিশাল সৌভাগ্য ও গুণ। এবং মেয়েটির ক্ষেত্রে ঠিক উল্টো। পুত্রসন্তান প্রসবকারী জননীদের দাম বেশী। ৩/৪ টি কন্যা সন্তানের পর একটি পুত্রসন্তানের জন্ম অথবা আরেকজন তরুণীকে সম্ভোগ করে পুত্রলাভের ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। গ্রামে বিয়ের ক্ষেত্রে পণ্যের বিচার-মূল্যে সবচেয়ে নির্বোধ, উন্মাদ যাই হোক না কেন, একজন যুবকের জন্য পাত্রী ঠিকই জুটে যায়। অথচ, সচ্ছল পরিবারের মাঝারি চেহারার বা শ্যামলা মেয়েদের পাত্রস্থ করতেও হিমসিম খেতে হয় পুরো পরিবারকে।
কয়েকটি শিক্ষিত সংস্কৃতমনা জেলা ছাড়া বেশিরভাগ জেলা শহরগুলোর সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার জায়গাটা ভীষণভাবেই দুর্বল। না আছে ভালো কোন ক্লাব, না আছে লাইব্রেরি না আছে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা। বাংলাদেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা ছেলেরা কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের সহপাঠী ছিল। এঁদের সঙ্গে চলে বুঝতে পারি ওঁদের কৈশোর আর আমাদের ঢাকা শহরের বেড়ে ওঠা কৈশোরে বড় কোন পার্থক্য নেই। তবে কিছু জেলা শহরে ধর্মের প্রকোপ বেশী, পর্দাপ্রথা বেশী। সেখানে অনেককে শৈশব কৈশোরে বড় একটা অংশে বেড়ে উঠতে হয়ে নারী-পুরুষের স্বাভাবিক সম্পর্কে একমুখী অজ্ঞানতা নিয়ে। মফঃস্বলে বেড়ে ওঠা আমার এক দুঃসম্পর্কের মামার কথা মনে পড়ছে। তিনি সারাজীবন বয়েজ স্কুল, বয়েজ কলেজ করে প্রায় নারী বিবর্জিত জীবন যাপন করেছিলেন। বিয়ের পরে নতুন মামীর প্রতিটা চালচলন ও কর্মকাণ্ড তাঁর কাছে বিস্ময়কর মনে হত। একজন অধরা আকাঙ্ক্ষিত নারীও যে খাওয়া দাওয়ার পাশাপাশি আর সবার মতো মল-মূত্র ত্যাগ করে, বায়ু ত্যাগ করে সেটা তাঁর ধারণার বাইরে ছিল ! নতুন মামীকে নিয়ে তাঁর আদিখ্যেতা ছিল দেখার মতো। প্রায়শ: আমাদের শুনতে হোতো, জানিস আজ তোর মামী এইটা করেছে ! জানিস, আজ তোর মামী সেইটা করেছে। আমরা কিশোর বয়সেই বিরক্ত বোধ করতাম।
আমাদের শহুরে ছেলেদের কৈশোরের দুঃসহতা ছিল। তবুও সংখ্যা গরিষ্ঠরা একটা মানসিক স্থিতির মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছি। মধ্যবিত্ত বাবা-মায়েরা, মহল্লার মুরব্বীরা, কো-এডুকেশন অথবা কোচিং লেভেলেই মেয়েদের সংগে চলাফেরা একটা স্বাভাবিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠতে সাহায্য করেছিল। অল্পবিস্তর বিকৃতি যে ছিল না , তাও বলব না।
কিছুদিন আগে আমি, আমার স্ত্রী, আর দশ বছরের কন্যা বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার স্ত্রী হঠাৎ করে মেয়েকে আরো কাছে টেনে নিয়ে ওর পরিধেয় কাপড় ঠিক করে দিল আর আমাকে নিয়ে একটু দুরে গিয়ে দাঁড়াল। আমি একটু অবাক চোখে তাকালে তৎক্ষণাৎ কোন উত্তর পাওয়া গেল না। ফেরার পথে জানালো, আমার ঠিক পিছন থেকে এক মাঝবয়সী বিকৃত পুরুষ নাকি জুলজুল করে কন্যার দিকে তাকিয়ে ছিল! কেউ তাকালে কী করবেন ? আমার সহপাঠিনীরা সেই সময়ে পাবলিক বাসে করে মিরপুর থেকে ইডেন , হোম ইকোনমিকস্ , সিটি কলেজে যাওয়ার সময় তাঁদেরকে কি পরিমাণে বিব্রত হতে হত জানি। বাসে কন্ডাকটর থেকে শুরু করে প্রৌঢ় , যুবক, কিশোর সবার চেষ্টা থাকত তাঁদের গা ঘেঁষে দাঁড়ানোর। অনেক সহপাঠিনীই ব্যাগ ও বই দুই হাতে বুকের সামনে চেপে ধরে রাখত। কিন্তু শরীরের অন্য স্পর্শকাতর অংশগুলোতে কারো না কারো অবাঞ্ছিত ,অনিচ্ছাকৃত(!) শারীরিক চাপ পড়তই। আবার এটাও ঠিক , সেই সময়েও অনেক সচেতন পুরুষ এই ব্যাপারটাকে বুঝে আমাদের সহপাঠিনীদেরকে নিরাপদ জায়গায় , মানে ড্রাইভারের বাঁ পাশের সিটে বসার ব্যবস্থা করতেন।
এখন তো অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। উন্মুক্ত-স্থানে বা পাবলিক বাসে একজন স্বাভাবিক পোশাকের তরুণীকেও জুলজুল করে, অশ্লীল বাঁকা চোখে পুরো বাসের পুরুষগুলো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। কয়জনকে বলবেন দৃষ্টি বদলাতে ? ধার্মিকরা ধরেই নিয়েছেন , এর সমাধান বেশী করে বোরখা ও হিজাব পড়া। সেটি করেও যে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না সে উদাহরণ ভুরিভুরি।
আমাদের বাঙালী পুরুষের সামগ্রিক আচরণ কতখানি সভ্য ও শ্লীল হওয়া উচিৎ সেটা পরিবার থেকে, বিদ্যালয় থেকে তাকে শিখিয়ে দেওয়া হয় নি। ইঁচড়েপাকা বন্ধু, কাজের ছেলে আর পাড়ার ডেঁপো ছেলে কাছ থেকে তার কুশিক্ষা শুরু হয়। এক পর্যায়ে নারীকে যোনি ও স্তনের সমন্বিত একটি ভোগ্যপণ্যের বাইরে কিছুই সে ভাবতে পারে না ! প্রতিটি নারী , সে যে বয়সেরই হোক না কেন তাদের কাছে ভোগ্য ও রমনযোগ্য মনে হয়।
আজ একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমার দশ বছরে কন্যা শিশুকে বোঝাতে হচ্ছে সে এই সমাজে কোথাও নিরাপদ নয়। তাঁর চারদিকে বসবাস করছে কুৎসিত, বিকৃত ও মুখোশ-ধারী পুরুষ পশু ; এর চেয়ে আফসোসের আর কি হতে পারে।
এবার দেখি আমাদের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে নারীদের সামাজিক অবস্থা কিরকম । একযুগ আগেও ক্যারিয়ার সচেতন মেয়েটিকে স্কুল, কলেজ , ব্যাংক ছাড়া অন্য কোথাও চাকরি করতে দিতে পারিবারিক বাঁধা আসত। এখন কর্পোরেট পরিবেশ অনেক নারীবান্ধব হয়েছে। নানা ধরণের প্রযুক্তির( মোবাইল ফোন ) উৎকর্ষতায় তাঁদের জীবন নিরাপদ। কিন্তু ঠিক উল্টো অবস্থা হয়েছে বাইরের রাস্তায় । অফিসে একটা শৃঙ্খলিত নিয়মনীতির ভিতরে একজন নারী যতোখানি নিরাপদ ; রাস্তা-ঘাটে সে ততোখানি অনিরাপদ।
আমার যে কাজের ক্ষেত্র–মার্কেটিং মার্চেন্ডাইজিং , সেখানে আমরা বহুবার নারী সহকর্মীদের উৎসাহিত করেছি দীর্ঘমেয়াদী ক্যারিয়ার পরিকল্পনার কথা ভাবতে । কিন্তু এখানেও সেই পুরুষ আধিপত্যের প্রচ্ছন্ন বাঁধা।
প্রথমত: পুরুষ কর্মকর্তারা নারীদেরকে তাঁদের নিজেদের বিভাগে নিতান্ত ঠেকায় না পড়লে নিতে চান না। যুক্তি হিসাবে তারা নারী কর্মচারীদের অফিস টাইমের শেষেই তাড়াতাড়ি বাসায় যাওয়ার প্রবণতাকে তুলে ধরেন। নারী কর্মচারী হয়তো কাজের চাপে ইচ্ছে করলেই আরো ঘন্টাখানেক থেকে যেতে পারেন অফিসে, কিন্তু বাইরের রাস্তার পরিবেশ ও স্বামী-সন্তানের চাপ , তাঁকে বাড়তি সময়দানে নিরুৎসাহিত করে।
দ্বিতীয়ত: পশ্চিমা দেশের সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে অনেকসময় সন্ধ্যার পরও অফিসে থাকার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। অথবা ক্রেতা আসলে তাঁদের সঙ্গে রাতের খাবারে উপস্থিত থাকার সৌজন্যতা থাকে। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য সব গার্মেন্টস উৎপাদনকারী দেশে সামাজিক অবস্থান ভেদে মার্চেন্ডাইজিং এর পুরো দখল নিয়ে রেখেছেন নারীরা।ব্যতিক্রম আমাদের দেশে। পুরুষ-শাসিত বলেই তাদের প্রাধান্য বেশী। যদিও গার্মেন্টস কারখানায় নারী শ্রমিকের জয়জয়কার।
তৃতীয়ত: একজন পুরুষ সহকর্মীকে দিনের যে কোন সময়ে যে কোন কারখানায় প্রোডাকশন ফলো আপের জন্য পাঠানো যায়। নারী সহকর্মীর জন্য প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব যানবাহন ছাড়া ও দিনের নির্দিষ্ট সময় ছাড়া কারখানায় যাতায়াতের প্রশ্নই ওঠে না।
এছাড়া আরেকটি ভয়ংকর অমানবিক দিক আছে, যেটা আমাদের কর্পোরেট কর্মকর্তারা মুখে উচ্চারণ করেন না। কিন্তু ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় ঠিকই বের হয়ে আসে। সেটা হচ্ছে, নারী কর্মচারীদের অন্তঃসত্ত্বা কালীন কর্মবিরতির সময়টি। এটা কেউ বিবেচনা করতে রাজী নয় যে মাতৃত্বের মতো একটা মহৎ বিশাল কর্মযজ্ঞে নারী তাঁর শরীর ক্ষয় করে বংশরক্ষার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। পশ্চিমা দেশে প্রায় বছর খানেকের বেতনসহ মাতৃত্ব কালীন ছুটি ছাড়াও ইচ্ছেমতো বেতন-বিহীন ছুটি প্রযোজ্য। আবার প্রতিষ্ঠানগুলোও ছুটির বিরতির পরে নারী কর্মচারীকে তাঁর আগের অবস্থানে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। আমাদের দেশে কর্পোরেট নারীদের অবস্থান ঠিক তার বিপরীতে। একজন দক্ষ নারী কর্মচারীর বিয়ে হয়ে যাওয়া মানেই, তাঁর নতুন অভিভাবক স্বামী –শ্বশুরকুলের নিত্যনতুন সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ। আর তারপরে তাঁর ক্যারিয়ারের বড় ধরণের ধাক্কা আসে মাতৃত্ব কালীন সময়টিতে। মাতৃত্ব কালীন ছুটিতে যাওয়া মানেই ধরে নেওয়া যায় তাঁর ক্যারিয়ারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেল। একটা বিরতি দিয়ে ফিরে এসে, নারী কর্মচারী তাঁর আগের অবস্থান ফিরে পান না । তাঁকে শূন্য থেকে শুরু করতে হয়। তা ছাড়া পারিপার্শ্বিক চাপে তাঁর ধ্যান ও জ্ঞান হয়ে পড়ে নতুন শিশুটি। এইসব বহুমুখী সীমাবদ্ধতা দেখিয়ে কর্পোরেট উচ্চপদস্থরা যতোই নারীবান্ধব কথাবার্তা বলেন না কেন ; নিয়োগদানের ক্ষেত্রে তাদের প্রাধান্য থাকে পুরুষ কর্মচারীর দিকে।
কর্পোরেট পরিবেশ নিয়ে আমার মতামতের সঙ্গে অনেকের মিলবে না ; কারণ আমার দেখা পরিস্থিতির চেয়ে অনেক ভালো পরিবেশ যেমন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আছে ; ঠিক তেমনি অনেক খারাপ পরিবেশও আছে। মোটা-দাগে, একটা সময় ছিল কর্পোরেট জগতের মেয়েদেরকে তাঁদের ঊর্ধ্বতনরা ও সহকর্মীরা সহজলভ্য ভাবতেন। মেধাবী ছাত্রীরা শিক্ষকতা করবে ; নিরাপদ পেশা। আর মোটামুটি সুন্দরী মেয়েরা সুপাত্রের গলায় ঝুলে পড়বে। নিজের আত্মসম্মানবোধ নিয়ে অনেক মেধাবী মেয়েরা বেসরকারি অফিসে কাজ করা শুরু করেছেন গত তিন দশকে। কিন্তু, এখনো নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে নিজের স্বামীর পায়ে দাঁড়ানোকে পরিবার থেকে উৎসাহ দেওয়া হয়ে থাকে।
ঢাকায় বেড়ে ওঠা ছেলেদের একটা সুবিধা ছিল, নারী সহকর্মী হেসে কথা বললে আমাদের হাসিমাখা প্রত্যুত্তর ছিল। কিন্তু মফস্বল থেকে আসা অনেকে হাসি মুখে কথা বলাকে প্রেমের প্রাথমিক প্রশ্রয় বলে ধরে নিতেন। এই সমস্যার পাশাপাশি ছিল, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও নারী কর্মচারীদেরকে সহজলভ্য ধরে নিতেন। অনেক লোভী ঊর্ধ্বতনকে নারী কর্মচারীকে দৈহিকভাবে না হলেও মানসিকভাবে অপদস্থ করতে দেখেছি। আমার এক নারী সহকর্মী একবার এক কর্মকর্তার রুম থেকে বের হয়ে যা বললেন, তার সাদা বাংলা দাঁড়ায় –কথা বলার চেয়েও সেই পুরুষ কর্মকর্তার চোখ সারাক্ষণ ঘুরে বেড়িয়েছে তাঁর বুকের দিকে নয়তো অন্য কোন বাঁকে।
আমাদের সচেতন সাবধানী কর্মকর্তাদের নারী সহকর্মীর সঙ্গে যে কোন আলাপ আলোচনায় সচেতনভাবে তাঁদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে হয়। মুশকিল হচ্ছে, সব পুরুষকেই নারী এক চোখে দেখা শুরু করে বলে যে কোন সাক্ষাতেই তাঁর প্রথম কাজটি হয় ওড়না ঠিক করা।
প্রাথমিকভাবে ওড়না মাথায় দেওয়ার ব্যাপারটি হচ্ছে, মুরব্বী শ্রেণির কাউকে দেখে সম্মান দেখানো। এটি কর্পোরেট জগতে নেই। দ্বিতীয়টি আছে। গলায় ওড়না থাকাটা ক্যাজুয়াল মুডের ব্যাপার। কিন্তু সামনে কোন পুরুষ পড়লেই অবচেতন মনেই তাঁর হাত বুকের অংশের ওড়নাটুকু ঠিকঠাক করে নেয়। নারীরা পুরুষ দেখলেই বার বার ওড়না ঠিক কেন করে তা এক কথায় বলা উচিৎ হবে না। এবং সব পুরুষের সামনেই সবাই এমনটা করে , তাও না। চরিত্র ভেদে পুরুষটির আচরণ ও চোখের আবর্তন দেখে নারীটি বুঝে নেয় তাঁকে কি করতে হবে। এটা মাঝে মাঝে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায়। পাঁচ মিনিটের কথোপকথনে কেউ যদি পনের কুড়িবার ওড়না ঠিক করে ; তাঁর দু’রকম অর্থ হতে পারে। হয়, নারীটি অবচেতনে পুরনো দীর্ঘ অভ্যাসের কারণে অস্বস্তি বোধ করছে পুরুষটির সামনে। অথবা , আসলে সে কি করবে বুঝতে না পেরে বা অস্থিরতা ঢাকতে ওড়না ঠিক করে চলেছে। পাশ্চাত্য তো অবশ্যই ; এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার অনেকগুলো দেশেও ওড়না বাহুল্যপ্রায়। আমাদের জীবদ্দশায় বাংলাদেশে ওড়না বিলুপ্তির কোন সম্ভাবনা দেখছি না। আরো কয়েক জেনারেশন ওড়না ব্যাপক ও বহুলভাবেই থাকবে।
প্রকাশকালঃ জানুয়ারি ২০১৭
সাম্প্রতিক মন্তব্য