বাংলাদেশে রোগীর চেয়ে চিকিৎসক বেশি। সামান্য অসুস্থতায়, আত্মীয় পরিজন, ভাই-বেরাদর, কাকা-জ্যাঠাদের পরামর্শ ও উপদেশ বর্ষিত হতে থাকে। মনো-বৈজ্ঞানিক সত্য এই যে, উপদেশদাতা নাকি অন্যকে উপদেশ দেওয়ার ছলে নিজেকেই নিজে উপদেশ দেন। জীবনের যে কোন বিপদসংকুল পরিস্থিতিতে অথবা শারীরিক অসুস্থতায় অভিজ্ঞ ও প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগীর পরামর্শ কতোখানি নেবেন আর কতোখানি বাদ দেবেন ; অথবা আদৌ ধর্তব্যে নেবেন কীনা সেটা হিসাব করে চলুন।
প্রত্যেক মানুষের কিছু সামাজিক এক্সপার্টিজ থাকে, যেখানে তাঁর পরামর্শ দেওয়ার যোগ্যতা আছে এবং ঐ বিশেষ ক্ষেত্রে তাঁর উপদেশ বা পরামর্শ আপনার মন দিয়ে শোনা উচিৎ । সবসময় উপদেশ ও পরামর্শের ব্যাপারেই অনীহা বা চরমভাবাপন্ন হওয়ার কোন মানে হয় না।
আমার প্রয়াত পিতার সবচেয়ে বড় শারীরিক দুর্বলতা ছিল তাঁর পাকস্থলী। সারাজীবন তিনি পেটের গণ্ডগোলে ভুগতেন। নানা রকম টোটকা আর ওষুধের মহড়া চলত। টেবিলের উপরে ফ্লাজিল, অ্যামোডিস ইত্যাদির জমে থাকত। এবং আমাদের তিন ভাইয়ের সামান্য ভুটভাটে তাঁর নানাবিধ ইন্সট্রাকশন জারী হত। কিন্তু , আমি জেনে শুনে পেট খারাপের যে কোন ব্যাপারে তাঁর মতামত কানে নিতাম না। যদিও সে প্রতিদিন ইসবগুলের ভুষি খা, পাকা বেল খা, কাঁচা কলা খা, পাকা কলা খা, এটা খা, সেটা খা বলেই চলতেন। তাঁর পাকস্থলী বিষয়ক উপদেশমালা গ্রাহ্যে না আনলেও আইনজীবী হিসাবে তাঁর মতামতকে সর্বোচ্চ দাম দিতাম। ঠিক একইভাবে আমার ছোটমামাও সেই অর্থে খুব সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন না ; ছাত্রজীবনে সর্বদা তাঁর জ্বর-সর্দি-কাশি লেগেই থাকত ; কিন্তু পড়াশোনায় ভীষণ ভাল ছিলেন। তাই পড়াশোনার ব্যাপারে তাঁর মতামত বিবেচনায় আসত সর্বাগ্রে।
কোন বিষয়ে যার/যাদের, পরামর্শ ও উপদেশ গ্রাহ্যে আনবেন, ঐ ক্ষেত্রে তাঁর/তাঁদের অভিজ্ঞতা ও সাফল্যের ইতিহাস একটু যাচাই করে নেবেন।
সাম্প্রতিক মন্তব্য