কিছু কিছু ইংরেজি শব্দের একদম শতভাগ বাংলা প্রতিশব্দ খুঁজে পাওয়া যায় না। এই যেমন Gut Feelings এর সঠিক বাংলা খুঁজে পাচ্ছি না। অন্তর্দৃষ্টি, অবচেতন, প্রজ্ঞা, বোধ অনেককিছুই হতে পারে। ব্যাপারটা এমন যে, কোন কোন সিদ্ধান্ত মানুষ যুক্তি তর্কের বাইরে গিয়ে তাঁর সহজাত অনুভূতি থেকে নিয়ে থাকে। জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই নিজের গাট ফিলিংস ( Gut Feelings) কে গুরুত্ব দিতে হয়।

হয়েছে কী, কয়েকশ বছর আগের একজন সাধারণ মানুষ সারাদিনে যে পরিমাণ সিদ্ধান্ত নিতেন, তাঁর চেয়ে এখন কয়েক হাজারগুণ বেশি সিদ্ধান্ত নিতে হয়। জীবন এখন অনেক জটিল, বিস্তৃত ও দুর্বোধ্য। ছোট ছোট সিদ্ধান্ত মানুষের জীবনকে একেকটা মোড়ে বাঁক খাইয়ে কোথা থেকে কোথায় যে নিয়ে যেতে পারে !

সারাদিনে আমাদের যতগুলো সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তাঁর বেশির ভাগ শারীরিকভাবে রিফ্লেক্টিভ ও স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে থাকে, সেগুলো নিতে গভীর চিন্তার দরকার পড়ে না। বৈজ্ঞানিক সূত্রে আধুনিক মানুষ সারাদিনে নাকি কম বেশি ৩৫ হাজারের মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে! এতো সিদ্ধান্তের মাঝে কিছুকিছু সিদ্ধান্ত আছে যেটা নিতে আমাদের সময় লাগে, চিন্তা করতে হয়, দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও বিভ্রান্তি কাজ করে। আমার জীবনের আমি যখন দেখেছি সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে, সেটা মাল্টিপল চয়েজ থেকে শুরু করে অনেক কিছুতে– যেখানে আমি তেমন কিছু বুঝতেই পারছি না, বা আমার কাছে যথেষ্ট ইনফরমেশন নাই। সে ক্ষেত্রে যে উত্তরটা ‘প্রথমবার’ মনে এসেছিল সেটাতে টিক দিয়ে চলে এসেছি। মনের গভীরে ঝাঁপ দেওয়ার যথেষ্ট সময় না থাকলে, এই পদ্ধতি কার্যকর। কারণ আপনার অর্জিত জ্ঞান আপনাকে প্রথমবারেই আপনার জন্যে সবচেয়ে অনুকূল সিদ্ধান্তটি আপনার মানস-পটে ভাসিয়ে তুলবে। এরপর যতো আপনি সেটা নিয়ে চিন্তা করবেন, ততো বেশি অপশন আপনার সামনে আসবে , বিভ্রান্তি ও দ্বিধা বাড়বে বৈ কমবে না।

আরেক অগ্রজ আমাকে শিখিয়েছিল, ‘When you are deep doubt, follow your heart, listen to you heart , not your fear ! And if your heart isn’t responding, talk to your mother !’

নিজের হৃদয়ের কথা শোনা ভালো। ওই যে বলে না, নিজের বুদ্ধিতে মরাও ভালো। আরেকজনের বুদ্ধিতে মরলে আফসোস থাকবে, কেন যে ঐ কথা শুনতে গেলাম ! অনেকসময় হৃদয়ও দিশাহীন হয়ে পড়ে, কোন সাড়া পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে আরেকটা ব্যাপার আমি বহুবছর মেনে চলেছি, আম্মার সঙ্গে কথা বলতাম। পড়াশোনা, চাকরি, ক্যারিয়ার,বিয়ে , জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আম্মার সঙ্গে কথা হয়েছে। হতে পারে, বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় একমাত্র জন্মদাত্রী মা-ই সন্তানের নিঃস্বার্থ শুভাকাঙ্ক্ষী। সন্তানের সর্বোচ্চ শুভাকাঙ্ক্ষী জন্মদাত্রী ছাড়া অন্য কারো হতে পারাটা প্রায় অসম্ভবের কাছাকাছি।

এমন না যে, আমার মা উচ্চশিক্ষিতা ছিলেন। তিনি একেবারেই সাধারণ গৃহিণী ছিলেন। যতোবার আম্মার কাছে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে গেছি ; উনি অনেকক্ষণ মন দিয়ে শুনেছেন। তারপর আমার মতামতের ভিতর থেকেই উনি বুঝে ফেলতেন আসলে আমার জন্যে কোনটা ভালো হবে, সেটাই তিনি বেছে নিতে বলতেন। গভীর অন্ধকারেও আমার মায়ের মশালের আলোয় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো আমার জন্যে দীর্ঘমেয়াদে ভালো হয়েছে।
যাঁদের মা বেঁচে আছে, তাঁরা সৌভাগ্যবান। আর যাঁদের জননী প্রয়াত হয়েছেন, তাঁরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিজের গাট ফিলিংসের উপরে ভরসা রাখুন।