টানেলের দুইদিক থেকেই দেখার চেষ্টা করুন। আমাদের ধর্মে ও ইতিহাসে ঘুরে ফিরে এই কথা বহুবার বলা হয়েছে, ব্যক্তির আচরণ বুঝতে হলে, আপনি নিজে তাঁর অবস্থানে কী করতেন সেটা একবার হলেও উপলব্ধি করার।
কোন পরিস্থিতিতে ব্যক্তি কী ধরণের আচরণ করতে পারে সেটা ঐ ব্যক্তির অবস্থানে নিজেকে চিন্তা না করতে পারলে বোঝা যায় না। কল্পনাশক্তির ব্যবহার করুন, নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে বোঝার চেষ্টা করুন, নির্দিষ্ট ব্যক্তি একটি পরিস্থিতিতে কেন ওইরকম আচরণ করল।

এই ব্যাপারটা চর্চা করতে পারলে, নিজেকে চরমভাবাপন্ন হওয়া থেকে বিরত রাখতে পারবেন। সত্যি কথা বলতে কী, এই চর্চা যদি শৈশব থেকে আমাদের প্রজন্মের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়া যেতো, আমাদের সমাজ অনেক বেশি সহনীয় হত।

ঘুরে ফিরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতামত দেখি। যদিও প্রথম বাক্যটি একটা নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে ‘গান্ধারীর আবেদন’ কবিতার , যাতে মাতৃ-স্বার্থের গন্ধ আছে। তারপরেও গান্ধারীর মুখনিঃসৃত এই চরণ গত শতাব্দীতে বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় হয়েছে।
“…প্রভু, দণ্ডিতের সাথে
দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে
সর্বশ্রেষ্ঠ সে-বিচার। যার তরে প্রাণ
কোনো ব্যথা নাহি পায় তারে দণ্ডদান
প্রবলের অত্যাচার। ”
(গান্ধারীর আবেদন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।।)

আবার কিছুটা হলেও সংঘাত তৈরি করে তাঁর আরেকটি উক্তি। এই উক্তিও বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয়। ‘ঘরে-বাইরে’ উপন্যাসের নিখিলেশের স্বগতোক্তি। “ যে দুর্বল সে সুবিচার করতে সাহস করে না,— ন্যায়পরতার দায়িত্ব এড়িয়ে অন্যায়ের দ্বারা সে তাড়াতাড়ি ফল পেতে চায়। ”

যতই বলি না কেন, জাজমেন্টাল না হওয়াই উত্তম। কিন্তু সেটা আর পারি কোথায় !
আপনি ক্ষমতাবান হন, দুর্বল হন, ক্ষমতালিপ্সু হন, ঊর্ধ্বতন হন—আপনাকে প্রতিদিন এই প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে যেতেই হয়। তাই, বিচারের রায় বা সিদ্ধান্ত দিয়ে ফেলার আগে একটু সময় নিন।