নৈরাশ্যবাদী ও নেগেটিভ লোক এড়িয়ে চলুন। এই ব্যাপারটা, আমার সহজাত ছিল ছোটবেলা থেকেই। করপোরেট জীবনে এড়িয়ে চলা যায় না। সফল মালিক, নিজের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ক্ষমতাশালী অনেকেই ভয়ঙ্কর নৈরাশ্যবাদী ছিলেন। জীবনের নানাবিধ সাফল্য অর্জনের পরেও তাঁরা কেন জানিনা চারিদিকে হতাশা ছড়িয়ে চলতেন। সফল, কিন্তু নেগেটিভ, কুটিল মনের মানুষের সঙ্গে চলার সমস্যা হচ্ছে , তাদের প্রতিটি ভণ্ডামো, চাটুকারিতার কাহিনী-কীর্তি নিজের মনের উপর কালো দাগ ফেলে। এদের সঙ্গে মানিয়ে চলতে গেলে, একসময় দেখা যায়, নিজেরও এদের মতো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমি সচেতনভাবে এদের সারাজীবন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছি। নিতান্ত এড়িয়ে চলতে না পারলে, ইগনোর করেছি, তাদের কর্মকাণ্ডের কিছু নিজের ভিতরে নিইনি।

একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর থেকে আমি আশাবাদী হতে শিখেছি। ঘরোয়া আড্ডায় আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের বলা একটা কথা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, নৈরাশ্যের ইট দিয়ে দিয়ে বর্তমান সভ্যতা গড়ে ওঠেনি। সভ্যতার ইমারত গড়ে উঠেছে আশাবাদে। কোটি কোটি নৈরাশ্যবাদী লোকের মাঝে গুটি কয়েক আশাবাদী মানুষ সমাজ ও সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যান।

বিশ্বাস করা শিখেছি ‘ মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়।’আমাদের সভ্যতার প্রতিটি গাঁথুনি শক্তিমান আশাবাদী মানুষের তৈরি। নৈরাশ্য এবং হতাশা দিয়ে কাব্য সৃষ্টি করা যায় হয়তো, আর কিছু না। আমি তো আর কবি নই; দণ্ডমুণ্ডের অধিকারীও কেউ নই। তাই, আমার উপলব্ধি , আশাবাদ আপনার চারপাশের পৃথিবী বদলে দিতে পারে । আর হতাশা ঠিক তাই করবে উল্টোভাবে। ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ‘ You will get, what you are afraid of !’ আপনি প্রতিমুহূর্তে কোনকিছু খারাপ হবে ভেবে থাকলে, আপনার সাথে তাই হবে।

আবার এটাও ঠিক, মাঝে মাঝে আমি হিসাব মেলাতে পারিনি। কেউই পারে না। কেননা পৃথিবী আমার আপনার আকাঙ্ক্ষিত নিয়মে চলে না । পৃথিবী চলে তাঁর নিজের নিয়মে। আধুনিক পৃথিবীতে আমাদের সাফল্য-ব্যর্থতার মাপকাঠি আর্থিক অবস্থান দিয়ে। একসময়ে মনে হয়েছিল, আশাবাদের সাথে সাফল্যের নিশ্চয়ই একটা প্রত্যক্ষ যোগাযোগ আছে ; তাই বলে আশাবাদী মনুষ্যমাত্রই সামাজিক ও আর্থিকভাবে সফল হবে সেটা বোধহয় অনেকাংশে সুনিশ্চিত নয়। এরপরেও আমি আশাবাদী। এবং আশাবাদী মানুষ বলতে হাল ছেড়ে না দেওয়া, উন্নত , উদার, সৌরভময়, উচ্চকিত সম্পন্ন মানুষকেই বুঝি।

প্রথম প্রকাশঃ নভেম্বর ২০২০