পরিপার্শ্বের সঙ্গে সঙ্গে নিজের পরিবার-পরিজনের সঙ্গে মানুষের আন্তঃসম্পর্ক কী রকম হওয়া উচিৎ– সেটা গত কয়েক হাজার বছর ধরে মহাপুরুষ, সাধু সন্ন্যাসী ও ধর্মগ্রন্থগুলো মৃদুভাষায় উপদেশ ও নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে করে যাচ্ছে। পুঁজিবাদী সমাজে ব্যক্তির অবস্থান তৈরি করা থেকে শুরু করে, সম্পর্ক তৈরি করা ও সম্পর্কের লালনপালন কীভাবে করতে হয়, সেটা শেখানোর দায়িত্ব নিয়েছে বই এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া।

জাপানে প্রচলিত প্রবাদ হচ্ছে, মানুষের তিন রকম চেহারা থাকে। একটি চেহারা সে বাইরের পৃথিবীকে দেখায়। দ্বিতীয় চেহারাটি তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু, আত্মীয় ও পরিবারের জন্যে। আর তৃতীয় চেহারাটা সে কাউকে দেখায় না বা দেখাতে পারে না । তৃতীয় চেহারাটিই হচ্ছে মানুষের আসল চরিত্র। মুশকিল হচ্ছে, সভ্য সমাজে মানুষ হিসাবে টিকে থাকতে হলে, প্রথম ও দ্বিতীয় চেহারাটাই প্রকাশ্য করা সম্ভব। নিজের গোপন গহীন কামনা,বাসনা, ঘৃণা, ক্রোধ, জিঘাংসা, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি নিয়ে যে তৃতীয় চেহারা আছে, সেটি কোনভাবেই কারো কাছে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

আমি যা উপলব্ধি করেছি। ব্যক্তির ব্যাপারে চারপাশের লোকে কী বলল তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নিজের সম্পর্কে তাঁর কী ধারণা এবং তাঁর পরিবারের লোকের কাছে তাঁর অবস্থান কী সেটা। বাইরের পৃথিবী একেক পরিস্থিতিতে, একেক পরিবেশে একজন মানুষকে মাঝারি মাপের , অলস মধ্যবিত্ত, ব্যর্থ, উন্নাসিক, অপরিণামদর্শী, স্ত্রৈণ, নানা অভিধায় অভিষিক্ত করলেও তাঁর বুদ্ধিবৃত্তি, হৃদয়বৃত্তি, স্নেহ, ভালোবাসা, সহনশীলতা মিলিয়ে সে নিজে কী, সেটা সে জানে। ব্যক্তি তাঁর বাবা-মার কাছে সন্তান হিসাবে কতোখানি ভালো ; তাঁর সন্তানদের কাছে পিতা-মাতা হিসাবে কতোখানি স্নেহপ্রবণ; তাঁর স্ত্রী বা স্বামীর কাছে সে কতোখানি দায়িত্ববান –সেটা, বাইরের লোকের জাজমেন্টের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

পৃথিবীর কাছে ঝাঁ চকচকে হয়েও পরিবারের কাছে অপাংক্তেয় হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে বড় ট্রাজেডি আর হয় না।