ক্লাস সেভেন।

সমাজবিজ্ঞান আর সাধারণ বিজ্ঞান পরীক্ষা পাশাপাশি দুই দিনে হয়। এটাই নিয়ম।বাংলা পরীক্ষার পর যেমন ইংরেজি। স্কুল ষাণ্মাসিক । যথারীতি রুটিন হাতে লিখে  কপি করে টেবিলের সামনে টাঙ্গানো থাকে। গ্যাঁ গ্যাঁ করে মাথা দুলিয়ে পড়াশুনা চলে ।

পরীক্ষার হলে গিয়ে দোয়া দরূদ পড়ে খাতা ভাঁজ করে, কোশ্চেন পেপারের জন্য অপেক্ষা। ভীষণ কড়া মেজাজের নুরুল ইসলাম স্যার প্রশ্নপত্র দিলেন।

দ্বিতীয় বেঞ্চে আমি আমার পরের বেঞ্চে ক্লাসের সেকেন্ড বয় তুহিন।কোশ্চেন পেয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম,  হাসি হাসি মুখ করে স্যারকে বললাম, ‘স্যার ভুল কোশ্চেন দিছেনতো । আজকে সাধারণ বিজ্ঞান পরীক্ষা !’

স্যার এগিয়ে আসতে আসতেই , পিছন থেকে তুহিন মৃদুস্বরে খোঁচা দিলো, ‘গাধা বইস্যা পড়, কোশ্চেন ঠিকই আছে, আজকে সমাজবিজ্ঞান পরীক্ষা ! আমার মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। এই মুখস্থের সাবজেক্টে আমি অলওয়েজ ল্যাজেগোবরে ! আমিতো সাধারণ বিজ্ঞান পরীক্ষার সেই রকম প্রিপারেশন নিয়ে এসেছি।  সমাজ বিজ্ঞানে ঠনঠন !

তব্দা মেরে  বসে পড়ে ফিসফিস করে বললাম, ‘দোস্ত এই যাত্রা বাঁচা !’

মহানুভব তুহিন বলল, ‘ঠিক আছে, আমি খাতা বাঁকা করে লিখছি, তুই দেখে দেখে ল্যাখ !’

শুরু হল, কসরত করে ঘণ্টা তিনেক ধরে আড়চোখে ওর গোটাগোটা হরফের লেখা দেখা আর কপি করা। সবগুলো অ্যানসার দিয়ে  হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

তো কয়েকদিন পরে খাতা দিচ্ছেন স্যার। ততদিনে ক্লাসের সবাই আমার ঐ কুকীর্তির কথা জেনে গিয়েছিল।

তুহিনের রোল নাম্বার আমার আগে। ও পেয়েছে ৫৩ আউট অব ৭৫

আর আমি, পেয়েছি ৫৮ !

কাহিনী কি?

সঙ্গত কারণেই  তুহিনের মন খারাপ। একই সঙ্গে আশপাশে ফিসফাস। ক্যামনে কি?

ঘটনা হচ্ছে, তুহিনের গোটাগোটা হাতের লেখা আমার চেয়ে স্লো।

ওর দুই লাইন কপি করে বসে না থেকে, অবসর সময়ে আমি আবঝাঁপ আরো কয়েক লাইন লিখে ফেলেছিলাম ;  তারই ফলশ্রুতিতে আমার নাম্বার ওর চেয়ে বেশী !

মরাল অব দি স্টোরি ১: বিপদের বন্ধুই সবচেয়ে বড় বন্ধু।

মরাল অব দি স্টোরি ২: এই কাহিনীর পর থেকে রুটিন তোলার  ব্যাপারে আমি ব্যাপক সাবধান হয়েছিলাম। জীবনে এক ভুল দুইবার হয় নাই !

প্রথম প্রকাশঃ ১লা এপ্রিল ২০১৩