আমি চাচ্ছিলাম ট্রাম্প ব্যাটাই আবার জিতুক।
প্রথমবার জেতার পর বিমলানন্দ পেয়েছিলাম। আম্রিকানরা সারাদুনিয়ার সবার পুটুতে আঙুল দিয়ে বেড়ায়। ট্রাম্প আসায়, নিজেদের পুটুতে, নিজেদের লোক আঙুল দিলে কেমন ব্যথা লাগে বুঝছে। এই যে আমরা বাকী দুনিয়াতে চুতিয়া সব নেতা-নেত্রীদের নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছি, আমাদের ফিলিংসটা হ্লারপুতেরা বুঝুক। রাষ্ট্রনেতার মতো সর্বোচ্চ সন্মানের পদে বসে একজন যখন হুদামিছা, আউল-ফাউল কথা বলে সেটা তৃতীয় বিশ্বে একচেটিয়া হয়ে গিয়েছিল। এবার বোঝ, ঠ্যালা !
আগের ইলেকশনে ট্রাম্পকে কেন ভোট দিচ্ছ, এক সাদা আমেরিকান বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করায় বলেছিল, ‘শোন জাহিদ, আমার সামনে দুইটা চয়েজ, একটা সুশীল ভণ্ড হিলারি ক্লিনটন আর আরেকদিকে পাগল-ছাগল ট্রাম্প। ভণ্ডের চেয়ে হৈহৈ রৈরৈ করা পাগল ভাল।’
এইবার সেই সাদা আমেরিকানের সঙ্গে কথাবার্তা হয় নাই।
তবে আমার মনে হয়েছে, ট্রাম্প একটা পাগলছাগল হলেও সারা দুনিয়ার পুটুতে আঙ্গুল দিয়ে বেড়ায় নাই। নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে। বাইডেন সাহেব আসলে সারা পৃথিবীর বিশেষত: তৃতীয়বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের কোথায় কোন যুদ্ধ বাঁধিয়ে বসবে কে জানে !
ট্রাম্পের ব্যাপারে আমার মন্তব্য, মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত –টাইপ। এই লোক হাউকাউ যাই করুক তার শাসনামলে বড় ধরণের কোন ঝামেলা পাকায় নাই। না দিয়েছে মেক্সিকোর বর্ডারে দেয়াল ; না করেছে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ।
কথায় বলে না, চেনা শত্রু অচেনা বন্ধুর চেয়ে অনেকসময় ভাল। কারণ, চেনা শত্রু কী কী করতে পারে, সে সম্বন্ধে একটা ধারণা তো থাকেই। কিন্তু এতোদিন পরে এই , ঘাঘুমাল বাইডেন এসে কী কী করবে কে জানে।
এনিওয়ে, সকল আম্রিকানবাসী সাদাকালোবাদামি ভাই-বেরাদারদের শুভেচ্ছা। গণতন্ত্র নিজেদের পুটুতে গেলে কেমন লাগে বোঝেন অ্যালা !
আম্রিকার ইলেকশনে আমি ও আমার প্রবাসী বাংলাদেশীদের অবস্থা অনেকটা এ রকম :
বহু শতাব্দী আগে কেউ কাউকে সুসংবাদ দিলে প্রশংসা ও বখশিশ পাওয়া যেতো।তো সেটা জেনে এক লোক নাসীরুদ্দীন হোজ্জাকে গিয়ে বলল,
: ‘তোমার জন্য খুব ভালো খবর আছে, মোল্লা-সাহেব।’
: ‘কী খবর?’
: ‘তোমার পাশের বাড়িতে পোলাও রান্না হচ্ছে।’
: ‘তাতে আমার কী ?
: ‘তোমাকে সে পোলাওয়ের ভাগ দেবে বলেছে।’
: ‘তাতে তোমার কী ?’
এই যে মোবারক ওরফে বারেক ভাইয়ের পরে জয়নাল ট্রাম্প এসে আম্রিকাকে হুলুস্থূল করল। একবার মেক্সিকোর বর্ডারে দেয়াল দেয়। আরেকবার উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে পারমানবিক যুদ্ধ বাঁধায়। কিছু অভিযোগ করলেই মুখ বাঁকা করে বলে’ ফেইইইক ন্যুজ !’ ব্যাপারটা আমার বরাবর ভালো লাগতো।
সব সময় মনে হতো, আরে এই লোক তো আমাদের ওয়ার্ড কমিশনারের মতো উত্তর-দক্ষিণ কথা বার্তা বলে। ব্যাটাকে অনেক আপন আপন মনে হইত রে ভাই !
মোবারক ভাই বলেন আর জোবায়ের বাতেন ভাই বলেন, এদের মতো ওর কোন মিষ্টি মিষ্টি কথা নাই ; যা মনে আসতো তাই বলতো।
নির্বাচনে জিতে , আজ জোবায়ের বাতেন ভাই আর কমলা আপার সেই ‘মাপা হাসি চাপা কান্না’ দেখে মনে হচ্ছিল হলিউডের কোন সিনেমা দেখছি। খুব লম্বাচওড়া কথা ; অনেকটা আমাদের মোটিভেশনাল স্পিকাররা ইদানীং যেরকম করে দেয় আর কী! আম্রিকা হ্যান, আম্রিকা ত্যান, কিপ ফেইথ, স্প্রেড ফেইথ ইত্যাদি ইত্যাদি। মিষ্টি কথার আড়ালে আগামী চারবছরে এদের অমানবিক আগ্রাসী পুঁজিবাদের কবলে পড়ে কার কার সর্বনাশ হয় সেটাই দেখার ব্যাপার।
আমার মামার কাছে শুনেছিলাম জেনারেল জিয়ার প্রথম দিকের ইলেকশনে সবাই দলবেঁধে ধানের শীষে ভোট দিতে যেতো। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে আওয়ামীলীগ তখন সাময়িক পরবাসে, নিভু নিভু করে জ্বলছে। যে কোন সামরিক শাসকের আবার জনপ্রিয়তা থাকে ১১০% । ভোট হলে অন্য কারো ভোট খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। যাই হোক, কুষ্টিয়ার কোন এক আসনে ‘চিন্টু’ নামের ( ডাকনাম, আসল নাম মনে নেই ) ভয়ংকর এক দুষ্টু লোক ভোটে দাঁড়িয়েছিল। কীভাবে কীভাবে যেন সে ধানের শীষ প্রতীকও ম্যানেজ করেছিল।
ভোট শেষে চিন্টু মিঞার বিজয়োৎসব শুরু হলে, এক লোক ক্ষোভে ফেটে পড়ল, ‘ভোট দিলাম ধানের শীষে, শালার চিন্টু হারামজাদা এমপি হোল কেম্মা কইরে !”
আমাদের নতুন চিন্টু মিঞা —জোবায়ের বাতেন ভাই এখন কী কী দুষ্টুমি করে সেটা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
আবারো অভিনন্দন জোবায়ের বাতেন ভাই এবং কমলা আপা ।
প্রকাশকালঃ ৫~৮ নভেম্বর,২০২০
সাম্প্রতিক মন্তব্য