ভালোবাসায় , প্রেমে, করুণায়, ঘৃণায়, শরীরে , শীততাপে, ব্যক্তিগত বাহনে, ফেসবুকে, মোবাইলে কতকিছুতেই না মানুষ ক্রমশ: অভ্যস্ত হতে থাকে !

লোকে যেটাকে স্মার্ট-ফোন বলে –বছর চারেক আগেও কেমন অনভ্যস্ত ছিলাম ওইটাতে । মার্কামারা একটা Nokia ফোনে Key চেপে চেপে এসএমএস দিয়ে ব্যাপক বিনোদন পেতাম,। মাঝে মাঝে চিন্তা করতাম , ইস একটা Nokia –N বা E সিরিজের একটা ফোন কিনলে বেশ হতো ! কয়েকজনের স্মার্ট-ফোন দেখে অবাক ভাবে চিন্তা করলাম ক্যাম্নে কী ! কলিগদের কেউ কেউ বলল, এই ফোনে মেসেজ লেখা , ই-মেইল চেক করা ইন্টারনেট সার্ফিং করা অনেক সুবিধা। আমার তখন বাঁধা উত্তর ছিল, ভাইরে আমি ফোনে হয় এসএমএস দিই অথবা কথা বলি। ফোনে আমার রেডিও, টর্চ , ইন্টারনেট না থাকলেও চলবে ! মোবাইলে টর্চ লাইট বা ই-মেইল চেক করার দরকারটা কি এইটা আমি বুঝতে পারতাম না। কথা বলা ছাড়া মোবাইলের আর কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে, এই ব্যাপারেও আমি মফিজ ছিলাম। জানি না , কেমন কেমন করে একটা সেকেন্ড হ্যান্ড আই-ফোন কিনে সেটাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এখন আমার আমার পক্ষে নকিয়ার কী প্রেস ফোনে ব্যাক করা সম্ভব না মনে হয়!

আম্মারা গ্রামে আর তাঁর এক মামী তখন জেলা শহরে থাকতেন। গ্রামের বাড়ী এলেই আম্মার মামীর হারিকেনের আলোতে মাথা ঘুরত, উনি মনে হয় ওই টিমটিমে আলো সহ্য করতে পারতেন না। উনার এই অবস্থা দেখে আম্মারা ভাবতেন, উনি বোধহয় ‘ভাব’ নিচ্ছেন। পরে আমরা ঢাকায় স্থায়ী হওয়ার পরে আম্মা নিজেই বুঝলেন উনিও আর হারিকেনের আলো সহ্য করতে পারছেন না । নিতান্তই নির্দোষ অভ্যস্ততা !

বছর তিরিশেক আগে থেকেই , ঢাকার সাদা টিউব লাইটে অভ্যস্ত আমি। নানাবাড়িতে তখনও ফিলিপ্সের হলদে গোল বাতি। নানা বাড়ীর ওই বাতি আমার মোটেও ভালো লাগতো না। কেমন যেন ম্লান , ধূসর ও দরিদ্র মনে হতো। আমি অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম সাদাটে উজ্জ্বল আলোয়।
বছর খানেকের স্মার্ট-ফোন ব্যবহারে আমার কী নিদারুণ নিষ্কৃতি হীন অভ্যস্ততা!

প্রকাশকালঃ ৬ই এপ্রিল,২০১৭